অভিনব প্রতিশোধ ( ১ম পর্ব)

**অভিনব প্রতিশোধ ( ১ম পর্ব)**
** অলোকা চক্রবর্তী **

আমি নন্দিনী একটি কলেজে পড়াই , আজকে শরীরটা ভালো লাগছে না বলে কলেজ গেলাম না। আমাদের বিশাল পৈতৃক পুরোনো আমলের বাড়ি কোচবিহার শহরের কাছাকাছি। আমি বর্তমানে সেখানেই -মা, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আর ভগবান দা থাকি এই গোটা বাড়িটায়। আমার জীবনের অনেক গল্প আছে , ভালবাসা হ্যাঁ এসেছিল যথাসময়ে , জড়িয়েও নিয়েছিলাম তাকে হৃদয়ের সর্বস্ব দিয়ে কিন্তু কি যে হলো--। 

সকালবেলা কে এতো কলিং বেল বাজাচ্ছে--, ভগবানদা বা গেলো কোথায়?।
 দরজা খুলেই দেখি-- একি কাকে দেখছি। পাঁচ বছর যার স্মৃতি আঁকড়ে দিন কাটাচ্ছি সে সামনে দাঁড়িয়ে।
 চিৎকার করবো বা কোন কিছু বলবো শক্তি নেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি -- , অভিনব আমার সামনে দাঁড়িয়ে অট্ট হাসিতে ফেটে পরলো ,বলল কি ভূত ভাবছো ?। কলকাতার পাঠ চুকিয়ে চলে এসেছো ভাবলে আমি খুঁজে পাবো না ‌তাইতো ? আবার সেই অট্ট হাসি ওর । 
 
আমি যাকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসতাম তাকে চোখের সামনে দেখে কেন হাত- পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। কেন ওর বুকে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারছি না। এতদিন তো মনে মনে ঠাকুরকে বলতাম একবার আমার অভিনবকে ফিরিয়ে দাও ঠাকুর। কত চোখের জল ফেলেছি অভিনবের জন্য অথচ আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব কেমন একটা কর্কশ গলায় বলল তোমাদের উপরের ঘর গুলো তো খালি আছে আমি উপরে গিয়ে রেষ্ট নিচ্ছি এককাপ ব্ল্যাক কফি পাঠিয়ে দাও অথবা তুমি নিয়ে এসো।

আমি চুপচাপ ঘরে বসে ভাবছি উপরে ঘরে বোধহয় অভিনবের অশরীরী আত্মা ফিরে এসেছে আমার ভালবাসার টানে। আমি আমার মধ্যে নেই ঘোর আছন্নে --একটু আগের ঘটনা আর অভিনবের অট্টহাসি যেন কানে বাজছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ভয়ে-- সত্যি না মনের ভুল এই ভেবে।

সেই সময় আমার কলকাতার কলেজের আগের কলিগ নমিতা ফোন করে-- আমি 'হ্যালো' -বলতেই নমিতা বলল নন্দিনী তুই একবার কোর্টে দাঁড়িয়ে বল না বিমান এই খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। বিমানের সঙ্গে তোর কোন সম্পর্ক ছিল না। বিমানের কি মোটিভ থাকবে অভিনবকে খুনের। শুধু শুধু বেচারা জেল খাটছে আজ পাঁচ বছর হলো ,দেখ আমাদের দুটো জীবনই বিনা অপরাধে নষ্ট হয়ে গেল। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম আমার জীবনটাও তো নষ্ট হয়ে গেল নমিতা সেটা কি ভেবেছিস একবারও।

সেই সময় অভিনব কর্কশ গলায় বলল এককাপ কফির জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে--হবে ?। আমি আবার অভিনবকে দেখে মূর্ছা যাবার যোগাড়‌ । ওদিকে নমিতা ফোনের উপার থেকে বলেই যাচ্ছে এই কে কথা বলল নন্দিনী, ওটা কার গলা --, আমার নমিতাকে উত্তর দেবার ক্ষমতা নেই ফোন রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। অভিনবের গলা মন হলো দূর থেকে ভেসে এলো-- ঘরের সামনে যেন পাঁচ মিনিটের মধ্যে কফিটা রেখে দেওয়া হয়।

এক সপ্তাহ হতে চলল আমি ঘোরের মধ্যে আছি , মাঝে মাঝে এক ঝলক অভিনবকে দেখতে পাই। তবে আমাকে ব্যাঙ্গ করে অট্টহাসিটা দেখা হলেই হাসে। আমার আজকাল মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে মনে হয় কে যেন মাথায় হাত রাখল, আলতো স্পর্শ পাই কপালে কিন্তু ভয়ে চোখ খুলতে পারি না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় অনেকক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে যখন উঠে বসি তখন দেখি আমার ঘরের দরজা হাট করে খোলা হাওয়ায় দুলছে বীভৎস আওয়াজ করে। জানি না সবটাই আমার মনের ভুল না অবচেতন মনে কোন ভয় বাসা বেঁধেছে যার জন্য ঘুমাতে পারি না। ভগবানদাকে কিছু বলতেও পারিনি খালি বলেছি টাইমে টাইমে খাবার আর কফি উপরের ঘরের সামনে যেন রেখে আসে আর এই নিয়ে আমাকে যেন কোন প্রশ্ন না করে।

আজকে শনিবার ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরেছি হঠাৎ ভগবানদা আমাকে ডাকছে দিদিমণি উঠো দেখো কলকাতা থেকে তোমার বন্ধু এসেছে। আমি চোখ খুলে দেখি নমিতাকে, বললাম হঠাৎ তুই এলি খবর না দিয়ে--। 

** (ক্রমশ)

Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

আমি সেই মেয়েটা