মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

** মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব) **

**  কলমে -- অলোকা চক্রবর্তী **


মল্লিকা আমাকে অনুরোধ করে কয়েকটা দিন সময় দিতে যাতে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে এবার ওর ফাইনাল পরীক্ষা। আমি ওকে বলেছিলাম তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো আমার সহযোগিতা সবসময় তোমার জন্য থাকবে। 

         আমি তো চাই তুমি জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করো। সবার কাছে তুমি এগজাম্পল হয়ে থাকো একস্পেশন্যাল প্রতিভাবান হিসেবে। যা আমাকে গর্বিত করবে আমার সমস্ত সাফল্যকে ছাপিয়ে তোমার সাফল্য পরমআত্মতৃপ্তিতে উজ্জ্বল মহিমায়।

         জীবিকার তাগিদে আমিও ব্যস্ত হয়ে পরি কয়েকদিন সংবাদ সংগ্রহের জন্য দেশের এই সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্তে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ গোলযোগের আঁচ আসে মাঝেমধ্যে আমাদের সীমান্ত গুলোতে। সেই সমস্ত খবর জানবার উদগ্রীব থাকে দেশবাসীর, আর আমাদের সাংবাদিকদের দায়িত্ব থাকে সঠিক সংবাদ জানিয়ে গুজবের অবসান ঘটানো।

         কাজের চাপে মল্লিকাকে ভুলে থাকলেও কলকাতায় ফিরলে মল্লিকার সঙ্গে দেখা না করে থাকতে পারিনা তাই দেখা করি মনের তাগিদে। দুজনে মিলে একটা সময় ঠিক করে মল্লিকাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলাম একদিন  মায়ের সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। মল্লিকার আগমনে আমার মা খুব খুশি হলোনা বুঝতে পারলাম মায়ের ব্যবহারে। 

         হয়তো আমার মা মল্লিকাকে সাধারণ সাজে দেখে  নিজের মতন করে মূল্যায়ন করেছে।বাইরের চাকচিক্য দেখে একটা মানুষের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না বেশিরভাগ মানুষই এটা বুঝতে চাননা । আমি কোনভাবেই মল্লিকাকে অসম্মানিত হতে দিতে পারি না তাই তাড়াতাড়ি কথা সেরে ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।

         কয়েকদিন বাড়িতে আমার সঙ্গে মায়ের বাদানুবাদ চলল আমার পছন্দের মানুষকে নিয়ে। মাকে বোঝাতে পারছিনা 'আধুনিকতা' একটা খোলস যা মানুষটার ভিতরের চরিত্র পাল্টে দেয়।মল্লিকার মত মেয়ে এই সমাজে বিরল,ওর মতো সর্বগুণ সম্পন্ন মেয়ে আমার জীবনে এসেছে এটাই আমার পরম সৌভাগ্য।

         আমাকে 'মা' টলাতে পারেনি মল্লিকা ছাড়া অন্য কিছু ভাবনা ভাবার। মা অবশেষে বুঝেছিল আমি মল্লিকাকে সত্যি করে অন্তরের সবটুকু দিয়ে ভালবাসি। মা বুঝেছিল ওই সাধারণ মেয়েটা আমার কাছে কতটা দামী, বুঝেছিল মা  কেন আমি ওকে পৃথিবীর সেরা মেয়ে মনে করি এই অনুভব কতটা ভালবাসলে  হয় সেই পরম সত্যিটা।

         আমাদের দেশের অসংখ্য মেয়ে স্বাধীনতা অভাববোধে মনে মনে নিরুচ্চার আর্তনাদে বিধাতাকে অভিসম্পাত করে, হয়তো মুক্তি আলোর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁরা । অথবা কেউ ভাবছেন  মেয়ে জন্মের এটাই স্বাভাবিক প্রাপ্য‌ এর বেশি প্রত্যাশা করা উচিত নয়।

         আবার সেই মেয়েরাই পট পরিবর্তন হলেই অন্য মেয়ের স্বাধীন জীবনযাপনকে উশৃঙ্খল বলে আখ্যা দেয়। মেয়েরাই নিজেরাই নিজেদের গন্ডীতে বেঁধে রেখেছে পরম্পরায় সেখানে পুরুষের আধিপত্য থাকলেও খুব সামান্য। মেয়েরা নিজেদের অবচেতন মনের ইচ্ছেটাকে কখনও মান্যতা দেয়নি। তাঁরা ভালবাসার ঘরে ভালবাসার জনের কাছে বন্দি হতেই ভালবাসে।

         বেশী ভাগ মেয়ে স্বাধীন হতে চায়না পরগাছা হয়ে কাউকে অবলম্বন করে খুব আত্মতৃপ্তিতে জীবন কাটাতে চায়। আমি মল্লিকার মধ্যেও এই একই প্রবনতা দেখেছি যেকোন সিদ্ধান্তে আমার মতামত চাইত । অথচ শিক্ষা, রুচি,চিন্তার গভীরতা কোনকিছু ওর কম ছিল না। ভালবাসার অদ্ভুত সমর্পণ যা আমরা পুরুষ মানুষেরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারিনা।

         যাহোক ধীরে ধীরে মায়ের অভিযোগ, অনুযোগ, উদ্বেগ, আকুলতা যা ছিল আমার জন্য যে আমি সুখী হতে পারবেনা, পরিশেষে আমার গভীর ভালবাসার ভাষার  যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পেরেছিলাম মাকে মল্লিকার জন্ম এই পৃথিবীতে আমাকে ধন্য করার জন্য হয়েছে। মা নিজেই এরপর মল্লিকাদের বাড়িতে গিয়ে ওকে আশির্বাদ করে বিয়ের দিন ঠিক করে আসে খুশি মনে। আর একমাস পরে আমাদের বিয়ে কিন্তু--।


Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

আমি সেই মেয়েটা