কালো মেয়ে (গল্প)
**কালো মেয়ে **
** অলোকা চক্রবর্তী **
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে-সাধারণ মনের মেয়েরা এই সত্যিটা খুব ভাল করে জানে। তারা জানে তাদের কর্তব্য -তারা চেষ্টাও করে এই কর্তব্য পালনের।তাদের জীবনে যেমন আছে বাধা, তেমনি উৎসাহ দাতাও তারা পায় ।আজ সমাজে ও সংসারের অন্তঃপুরে গত কয়েক বর্ষে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আজকে ছেলে ও মেয়েরা স্কুল, কলেজে এক সঙ্গে পড়ছে।একসঙ্গে সর্ব কাজ করছে, তবুও কিছু ক্ষেত্রে সমাজ সংসার কতগুলো সীমাবদ্ধতা বেঁধে দেয়।
এই কালো মেয়েরা কখনও কখনও সমাজে সম্মান পায় না, তারা রুপের বিচারে ভীষণ অবহেলিত। তাদের মধ্যে যাদের লড়াই করার মানসিকতা আছে, সে নিজের যোগ্যতাই ছিনিয়ে নিতে পারে নিজের সম্মান। যদিও আজ সমাজের মানুষের মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
সেরকম এক মনের মানুষ সমরেষ বসু, তার দুই মেয়ে, স্বর্ণালী ও কনক ।সমরেষ বাবুর যৌথ সংসার, তার মা ,বাবা তার ছোট ভাই তার স্ত্রী ও তাদের ছেলে, সোহম নিয়ে তারা থাকেন। সমরেষ বাবু তার বড়ো মেয়ের যথাসময়ে বিয়ে দিয়ে দেন। সমরেষ বাবু ছোট মেয়ে কনক যাকে সমরেষবাবু কণি বলে ডাকেন ।কণির গায়ের কালো বলে সমরেষবাবু জানেন জন্ম থেকে সবার কাছে অবহেলিত।হয়তো এইকারণেই সমরেষবাবুর চোখের মনি ছিল কণি।
কণিকে বিয়ে দেবার জন্য কণির ঠাকুরমা সমরেষবাবুকে জোর করতেন ।কয়েকজন এলো কণিকে দেখতে, কিন্তু তাঁরা গায়ের রঙ কালো বলে কণি কে বাতিল করে।নানাজনে নানা মন্তব্য সমরেষবাবু কে খুব বিদ্ধ করে।ওনি ভাবেন আমার সুন্দর মনের মেয়েটার মনের বিচার কেউ করে না। শুধু বাইরের চাকচিক্যটাই প্রাধান্য পাচ্ছে এদের কাছে ।
এইসব দেখে কণি একদিন ওর বাবাকে বলে বাবা আমার এসব ভালো লাগচ্ছে না। বাবা তুমি আমাকে জিততে সাহায্য করো আমি এই ভাবে হারতে চাই না ' আমি লেখাপড়া শিখে নিজের একটা পরিচয় করতে চাই।সমরেষ বাবু মনে মনে এটাই চেয়ে ছিলেন।বলেন তুই এগিয়ে যা মা আমি তোর সাথে আছি।
বাবা আর মেয়ের চুপিচুপি এক অলিখিত চুক্তি হয়ে গেল। এরপর যখন কণিকে দেখত আসতো কণির বাবা তাড়াতাড়ি করে কণিকে শুইয়ে দিয়ে বলতেন কণি ভীষণ অসুস্থ কণি পাত্র পক্ষের সামনে আসতে পারবে না ।অথবা কখনও সমরেষবাবুর ভাইয়ের ছেলে সোহমের সাহায্যে পাত্রপক্ষকে রাস্তা থেকে বিদায় করে দিত।সোহম কণি আর সমরেষবাবু নানা ফন্দী করে কণির বিয়েটা আটকায় ।কণির মা সব বুঝতে পারেন হয়তো মনে মনে এটাই চাইছিলেন তাই চুপ করে থাকেন ।
দিনের আবর্তনে কণি আজ লেখাপড়া শিখে নিজের একটা জায়গা তৈরী করছে। কণির কলেজ জীবনের সহপাঠী সৌমের সাথে কণির মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে।কণি তার বাবা কে সৌমের সব কথা বলে, সমরেষবাবু ভীষণ খুশি হন।
কিছুদিন পর যখন কণির বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয় সমরেষ বাবু এক প্রকার জোর করে বাড়ির সবাইকে তার কালো মেয়ের সাফল্য দেখাতে নিয়ে এসেছেন। মঞ্চে একে একে সকল কৃতী ছেলে ও মেয়েদের পুরস্কৃত করা হল।অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোত্তম দুই ছাত্র ও ছাত্রী,সৌম মুখার্জ্জীও কণক বসুকে পুরস্কৃত করার জন্য ডাকা হলো মঞ্চে।
কনক আর সৌমকে একসঙ্গে দেখে কণির ঠাকুমা সমরেশবাবুকে বলেন আমাদের কণির সাথে ছেলে টিকে কেমন মানিয়েছে দেখ কিন্তু আমাদের কণির গায়ের রঙ দেখে কি আর ওরা ওকে বৌ করবে। সমরেষবাবু মাকে হেসে বলেন মা আজ আমার কণির পরিচয় কালো মেয়ে বলে নয়। আজ আমার কণির পরিচয় ডঃকনক বসু,, ইতিমধ্যে কনক ও সৌম সবাই কে প্রনাম করে, দুই পরিবার আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত সেইসময় কণি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে বাবা !আজ যা কিছু সব তোমার জন্য তুমি আমাকে হেরে যেতে দাওনি আমায় জিতিয়ে দিয়েছো তুমি আমাকে। সমরেষ বাবু কণির মাথায় হাত রেখে বলেন না মা তোর জেতার যেদ ছিল তাই তুই আজ জয়ী।
Comments
Post a Comment