ফিরে দেখা ( ৩য় পর্ব)
** ফিরে দেখা (৩য় পর্ব)**
** কলমে -- অলোকা চক্রবর্তী **
বিছানা থেকে উঠে জানলার কাছে গিয়ে বসলাম,দূর থেকে দীঘির পাড়ের সেই আম গাছের বাঁধানো জায়গাটা দেখতে পেলাম যেখানে আমি আর দীপু কত সময় কাটিয়েছি।কত জীবনের গল্প সাজিয়েছি দুজনে মিলে কে কতটা ত্যাগ করবো,কে কতটা দায়িত্ব নেবো। তবে দুজনের একটাই শর্ত ছিল কোন অভিযোগ করবো না পরস্পরের দোষ ত্রুটি ধরে, বরং ঘাটতি যা থাকবে একজনের- আরেকজন সেটা পূরণ করবো।
আমি মাঝে মাঝে বলতাম "দীপু তুমি আমাকে কেন এত ভালবাসো বলতো"? , দীপু উত্তর দিত তুই তো এমন মানুষ যাকে ভালবাসায় ভরিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয় সর্বস্ব দিয়ে ।দেখবি 'কুহু' তোকে কখনও কষ্ট পেতে দেবো না । আমি তন্ময় হয়ে সেই পুরনো সব কথায় হারিয়ে বসে ছিলাম চুপচাপ।
বেলা মাসী ঘরে এসে বলে কিরে অন্ধকারে বসে আছিস , আলোটাও জ্বালাসনি। এনে চা খেয়ে আয় খাবার ঘরে তোর প্রিয় মোচার চপ আজকে বানিয়েছি। আয় সবাই মিলে গরম গরম খাবো। বেলা মাসীকে বলি তোমাকে কে এত খাটতে বলেছে বলতো। আমার তো খারাপ লাগছে, তোমার তো বয়স হয়েছে, আমার জন্য খেটে যাচ্ছো সেই সকাল থেকে। বেলা মাসী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে সন্তানদের জন্য কিছু করতে পারলে কত আনন্দ যে মনের মধ্যে হয় তুই বুঝবি না।
নিচে এসে আমাদের পুরনো খাবার ঘরে বসে আমি মেসোর কাছে টুকটাক গ্রামের চেনা পরিচিতদের খোঁজ নিচ্ছিলাম।
সবে একটা মোচার চপ আধখানা খেয়েছি এমন সময় বেলা মাসী বলল জানিস কুহু বেশ কয়েকমাস হলো দীপুরা আবার ওদের বাড়িতে ফিরে এসেছে। ওর ভাই এখন ডাক্তার , এখানেই রুগি দেখে। তবে সবাই বলাবলি করে দীপুর নাকি মাথার গন্ডগোল হয়েছে, শুধু তাকিয়ে থাকে কোন কথার উত্তর দেয়না। আমি দীপুর খবর শুনে সেই মুহূর্তে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম।
দীপু সেইসময় কোন কিছু না জানিয়ে গ্রাম ছেড়ে ওর মা আর ভাইকে নিয়ে চলে গেছিল। আমি দীপুর খোঁজ অনেক করে ছিলাম অবশেষে হতাশ হয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়েছিলাম তখন।
আমাদের বাড়ির পরিবেশ ক্রমশ পাল্টে যায় ঠাকুমা মারা যাবার পর থেকে। জ্যাঠুরা বড়দা কাছে চলে যায়,ছোটকাকু কাকিমার বাপের বাড়িতে বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারত্ব পেয়ে এখান থেকে চলে যায়। আমার বাবা মা, ছিলেন শেষ পর্যন্ত এই বাড়িতে। আজকে কারুর সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই।
আমি বেলা মাসীকে বলি আমি দীপুদের বাড়িতে একটু যাচ্ছি। বেলা মাসী আফসোস করে বলে এত কষ্ট করে চপগুলো করলাম খেলিনা, আমার তখন খাবার মানসিকতা সত্যি ছিল না।
আমি কোন ক্রমে নিজেকে সামলে দীপুদের বাড়িতে যেতেই ওর ভাই আমাকে চিনতে পেরে দীপুর কাছে নিয়ে গেল। আমি দীপু দেখে থাকতে পারলাম না,ওর হাতদুটো ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললাম । দীপু আমার মুখটা হাত দিয়ে ধরে তুলে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো কিন্তু একটাও কথা বলল না।
আমি ওকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললাম দীপু আমি কুহু ! তুমি কেন আমাকে চিনতে পারছো না?, কেন দীপু তুমি কথা বলছো না আমার সঙ্গে। আমি সেদিন তো কোন দোষ করিনি তোমার মত পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম আমিও ।
দীপু আমার চোখের জল মুছিয়ে শুধু মাথা নাড়িয়ে গেল। একটা কথাও বলল না অবাক চাউনি ওর । মনে হচ্ছে খুঁজে বেড়াচ্ছে কাউকে অবচেতন মনে অথচ প্রকাশ করতে পারছে না। আমার বুকের ভেতর জমাটবাঁধা কষ্টে দুচোখ জলে ভেসে যাচ্ছে।কি উপায়ে আমার দীপুকে সেই আগের অবস্থায় পাবো এই চিন্তায় খুব অস্থির লাগছিল। কিন্তু মনকে বোঝালাম আমাকে তো শক্ত হয়ে ওর পাশে থাকতে মনের জোর হারালে এখন চলবে না।
**পরবর্তী শেষ অংশ পোস্ট করেছি পরে নেবেন **
Comments
Post a Comment