ফিরে দেখা ( শেষ পর্ব)
**ফিরে দেখা ( শেষ পর্ব)**
** কলমে -- অলোকা চক্রবর্তী **
আমি দীপুর ঘর থেকে বেরিয়ে ওর ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম দীপু এখান থেকে চাকরিতে বদলি নিয়ে উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে চলে যায়। ওখান থেকে দীপুর ভাই ডাক্তারি পাশ করে। তারপর ওখানকার একটি হাসপাতালে চাকরি পায়। দীপু এই কয়বছর প্রায় কথা বলত না বিশেষ ,অফিস আর বাড়ি করত কিন্তু একদম চুপচাপ থাকত।
দীপুর ভাই চাকরি পাবার পর হঠাৎ একদিন দীপু বলে বাপি তুই মাকে একটু দেখে রাখিস আমি একটু ঘুরে দেখি আমাদের দেশ। সেই শুনে খুব কান্নাকাটি করে দীপুর মা ।ওনি অনেক বাধা দেবার চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভ হয়নি দীপু বলে ভাই রইল তো। এরপর প্রায় তিন বছর দীপুর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
দীপুর ভাই বহু জায়গায় গিয়ে খোঁজ খবর করে কিন্তু দাদাকে পাইনি। এই মাস ছয় আগে দীপুর ভাই দীপুর মাকে নিয়ে পুরীতে যায় মা খালি কান্না করে দাদার জন্য। ওই সময় একদিন ভোরবেলায় ওর ভাই দেখে একটা লোক সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে।জামা কাপড় সব ছেঁড়া, তখন কাছে যায় কৌতুহল বশত। কাছে গিয়ে গিয়ে দেখে ওর দাদা ওইরকম ভাবে বসে আছে।
ওর ভাই তখন জোরজবরদস্তি করে দাদাকে নিয়ে ফেরত যায় দেরাদুনে। ওখানকার বড় ডাক্তারের পরামর্শ চায় দাদাকে নিয়ে গিয়ে কি করে দাদা আবার আগের মত হবে। বেশ কয়েকজন ডাক্তার একই কথা বলে যে ওনাকে যেখানে আগে থাকতেন সেখানে নিয়ে যান।ওই পরিবেশে যদি আসতে আসতে ঠিক হয়।
আমি ফিরে এলাম তবে দীপুর ভাইকে বলে এলাম কাল থেকে দীপুর সব দায়িত্ব আমার। তুমি আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি একটু চেষ্টা করি। দীপুর ভাই বলল এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে কুহুদি। পরেরদিন সকালে আমি গিয়ে যেই দীপু বলে ডেকেছি দীপু কেমন নড়েচড়ে বসল, তারপর চারপাশে খুঁজতে লাগল ঘাড় ঘুরিয়ে।
আমি ওকে নিয়ে সেই মাঠের ধারে গিয়ে বসলাম। ও হাসলো তারপর আমাকে ইশারায় হাত দেখিয়ে বলতে চাইল এমন যেন এখনই কেউ একজন আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে আসবে তখন মাথা চুলকাতে লাগলো অবচেতন মনে যে নাম আছে তাকে প্রকাশ করতে পারছেনা। ওর এই অসহায় অবস্থা দেখে আমার ভিতরটা দুমমুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল।
নিস্পাপ ভালোবাসা আজকে ওকে কোথায় এনে ফেলেছে একি ভগবানের বিচার। কেন বাড়ির বড়রা বোঝেনা ,দুটো জীবন এই দশবছর ধরে বেঁচে আছে শুধু একবুক যন্ত্রণা নিয়ে। আমিও হাল ছাড়েনি দুমাস অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সারাদিন দীপুর সঙ্গে কাটিয়েছি। চেষ্টা করছি পুরনো পরিবেশ নতুন করে ফিরিয়ে আনার যা সব আমাদের ছিল, প্রয়োজনে বন্ধুদের সাহায্য নিয়েছি।
কিন্তু দীপুর কোন পরিবর্তন হয়নি, শুধু এখন মাঝে মাঝে আমার নামটা বলে। আমাকে ছাড়তে চাইনা হাতটা ধরে মাথা নাড়ে। আমি বুঝতে পারছি না আর কি করলে আমি দীপুকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবো।
অবশেষে আমি জিতলাম সেদিন একটা পরীক্ষা করলাম বন্ধুরা সবাই মিলে।আমি বলে রেখেছিলাম আমাদের এক বন্ধুকে আমি যখন দীপুকে নিয়ে বেড়োব ও যেন গাড়ি নিয়ে এসে ধাক্কা মারার চেষ্টা করে। দীপুর সঙ্গে রাস্তায় যেতে যেতে আমি হাতটা ছেড়ে রাস্তা পেরোতে যাবো ওইসময় আমার বন্ধু গাড়িটা নিয়ে আসে।
আমি পরে যাবার অভিনয় করে রাস্তায় শুয়ে পরি। আমাদের পরিকল্পনা নিখুঁত ছিল। দীপু আমার পরে যাওয়া আর গাড়িটা দেখে চিৎকার করে উঠে ডাকে কুহু --। তারপর ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে সেকি কান্না , খালি বলছে কুহু কথা বলো। তখন সবাই মিলে ওকে ধরে, আমিও ওকে বলি আমি ঠিক আছি আমার কিছু হয়নি।
এরপর ওর অনেক মান অভিমান ভাঙাতে হয়েছে আমাকে ,বোঝাতে হয়েছে আমি ওকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আর কোনদিন।
তারপর একটা শুভদিনে বেলা মাসী আর দীপুর মা আমাদের সব বন্ধুরা সাক্ষী থাকল আমাদের বিয়ের-- যা বহু বছর আগে আমরা দুজনে একসাথে থাকবো বলে চেয়েছিলাম। দীপু ওর যোগ্যতায় আবার চাকরি পেয়েছে, আমরা আবার আগের সব স্বপ্ন সত্যি করার জন্য এগিয়ে চলেছি পরস্পরের সহযোগিতায় ও ভালোবাসায় অবশেষে।
Comments
Post a Comment