এবার ঘরে ফিরে এসো

** সীমান্তে যাঁরা রাতদিন, নানা বিপদের মধ্যে দেশ‌ রক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সম্মানে আমার এই শ্রদ্ধার্ঘ্য।**

**এবার ঘরে ফিরে এসো **
** কলমে -- অলোকা চক্রবর্তী **

বীরপুরুষ সীমান্তে আজও তুমি অতীন্দ্রিয় প্রহরী বলেছিলে একদিন নাই বা থাকল আমার ঘর দেশবাসীরাই আমার আপনজন, 
অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ তুমি তবু তোমার সৈনিকের কড়া পোশাক তোমাকে শিখিয়েছে কষ্ট সহ্য করার সহিষ্ণুতা পাশে ছিল কিছু বন্ধু স্বজন, 
বেশ খানিকটা রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে এসেছিলে আমারই কাছে একটু স্বস্তির খোঁজে অতঃপর হয়েছিল দুজনের বন্ধুত্বের বন্ধন।

সবটুকু না বললেও বুঝেছিলাম অনেক বিপদ এসে তোমাকে ছুঁয়ে রক্তাক্ত করেছে,
তবু তোমাকে দমাতে পারেনি অদম্য সাহস তোমার,
 হাতে রাইফেল নিয়ে এগিয়ে গেছো শত্রুর সামনে
শত্রুরা দেশের‌ সীমানায় এসে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে,
 বার্মা থেকে লাদাখ তুমি ছিলে দুর্নিবার প্রহরী আশ্চর্য 
পাখির চোখ তোমার -- সেইজন্যই প্রত্যেকবার‌ তোমার সাহস তোমাকে জয়ী করেছে।

দীর্ঘদিন তুমি এই সীমান্ত থেকে ওই সীমান্ত ছুটে গেছো তোমার যৌবন থেকে প্রায় বার্ধক্যে এসে ক্লান্ত আজ মন‌, সৈনিকের পোশাক থাকলেও তোমার আজকাল একটা ঘরের ভীষণ প্রয়োজন,
হয়তো মনে হয় তোমার --সীমান্ত থেকে ফিরে আসলে কেউ দেবে একগ্লাস জল‌ এগিয়ে লড়াইয়ের‌ দম্ভ থাকলেও শান্তিও তো চায় মন,
তুমিও রক্ত মাংসের মানুষ তোমারও প্রয়োজন হয় শান্তির নীড় তাতে পরিবেষ্টিত থাকবে আপন মানুষজন।
 
আমাকে পাঠিয়েছিলে নিমন্ত্রণ তোমার হবার আমি অতি নির্বোধ আমার ব্যথা আর বুদ্ধিতে মিল নেই- মিল নেই ইচ্ছে আর শক্তিতে তাই তোমার প্রয়োজনের গুরুত্ব বুঝিনি,
হয়তো কতভাবে তোমার চোখ ঝাপসা হয়েছে তবু তুমি সৈনিক এই বার্তা দিয়েছো কিন্তু ভেঙ্গে পরোনি,
অবশেষে একদিন আমিও বুঝলাম তোমাকে ভালবাসি তাই তুমি বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলে ‌শীতল হাওয়ায় আমার আজকাল কাঁপন ধরে,
চাঁদ উঠে দেখি ঘুম থাকেনা চোখে তুমি যে জেগে আছো কোন এক নির্জন প্রান্তরে ।

আমরা ঝিনুকের দুটি খোলা মাঝখান ভরা আছে কিছু না 
বলা কথা আর অশ্রুবিন্দু‌ দিয়ে ভরা কিছু একান্ত অভিমান,
হৃদয় কেঁপে উঠেছে ভেবেছি যেই তুমি তো‌ শত্রুর পদক্ষেপ রোখার জন্য রয়েছো তারই মাঝে যেখানে রয়েছে গোলা, কামান,
কত হয়েছে দ্বন্দ্ধ তোমার আমার ভাবনার তফাৎ এর জন্য আমার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনায় যখনই তোমার কথা ভেবেছি, 
রোশনাই আর আলোর মাঝে তোমার মুখটা আমাকে বিদ্ধ করতো যদি তোমার অস্তিত্ব হয় বিপন্ন তখন প্রার্থনা সম্বল করে কত চোখের জল লুকিয়েছি ।
  
আজ তোমাকে লিখছি স্বার্থপরের মত ঘরে ফেরার সময় হয়ে গেছে এসো ঘরে আপন গরিমায় ,
তোমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা করে নেই এই ব্যথা পেয়োনা দেবো তো পুষ্পাঞ্জলি আমার দেবতায়,
জনসমাগমের অনেক মালা আর পতাকা‌ না থাকলেও প্রদীপ আর মঙ্গলঘট অবশ্যই থাকবে তোমার জন্য,
 আর থাকবে আমার পবিত্র ভালবাসা তোমার বীরত্বের পুরস্কার যা দানে আমায় করবে ধন্য,
সেদিন তোমার আবির্ভাবে একটি হৃদয় নেচে উঠবে সেটা আমারই হৃদয়-বোঝনা ‌তুমি ছাড়া আমার ভুবন যে শূন্য।
 
 অনেক যুদ্ধ করেছো দেশের জন্য এবার যুদ্ধ‌টা তোমার-- আমার কে কতটা ভালবাসি প্রথম দুজনে সামনাসামনি বসে দেখবো,
তোমার ফেরার দিনের সন্ধ্যায় তোমার ঘরের বাতিওয়ালা হয়ে অন্ধকার সরিয়ে বাতি জ্বালিয়ে রাখবো, 
 সব না পাওয়া তোমার এবার আমি পুষিয়ে দেবো কথা দিলাম এবার ফিরে এসো‌,
 বীরপুরুষ আর সৈনিকের পোশাক‌ নয় এবার চাই আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে তোমার-- হয়েছে কাঙ্ক্ষিত পবিত্র সন্ধিক্ষণ তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
 
 

Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

আমি সেই মেয়েটা