মল্লিকাঅর্জুন ( তৃতীয় পর্ব)
** মল্লিকাঅর্জুন ( তৃতীয় পর্ব) **
পরেরদিন অফিসের প্রচুর কাজের চাপ সামলিয়ে ঠিক পাঁচটা বাজার একটু আগেই ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছালাম। মাইকে তখন ঘোষণা হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। আমি ঘোষণা অনুসরণ করে মঞ্চের কাছে এগোচ্ছি একটি ছেলে এসে আমাকে বলল অডিটরিয়াম এইদিকে আসুন আমার সঙ্গে।ছেলেটি আমাকে প্রথম সারির পরেই বসার ব্যবস্থা করে চলে গেল।
আমার চোখ তাকে খুঁজতে লাগল যার আহ্বানে এখানে আসা । অনেকের প্রশ্ন ধেয়ে এলো আমার দিকে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা-- তাই বুঝতে পারলাম ওনার সজাগ দৃষ্টি রয়েছে আমার দৃষ্টির আড়ালে। কিছুক্ষণ পর সমবেত সঙ্গীত আরম্ভ হলো দেখলাম সবাই লাল শাড়িতে সুসজ্জিত।
এতো ফুলের মাঝে আমার মল্লিকা যে স্বতন্ত্র বোঝাই যাচ্ছে। মল্লিকা প্রথমে দুলাইন গাইছে তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে সবাই গাইছে। অসাধারণ পরিবেশনা দেখে অভিভূত হয়ে ভুলে গেলাম আমি কে, শুধু যে অদৃশ্য শক্তি মল্লিকার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটিয়েছেন তাঁকে অজস্র কৃতজ্ঞতা জানালাম অন্তরের।
অনুষ্ঠান চলতে লাগল আর আমি হারিয়ে যাচ্ছি আমার মল্লিকাবনে। এরপর সেই কন্ঠস্বর যা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল সেই স্বর নৃত্যানুষ্ঠানের ভূমিকা পাঠ করছে ,আমি মাথা নিচু করে মুগ্ধতার আবেশে শুনে যাচ্ছি ।
পর্দা উঠল গানের সঙ্গে নাচের ভঙ্গিমার একটু একটু করে গল্পের ছবি ফুটে উঠেছে, আমি মোহিত হয়ে দেখছি । মল্লিকার আগমন ঘটল---
"অর্জুন ! তুমি ! অর্জুন!
ফিরে এসো, ফিরে এসো,
ক্ষমা দিয়ে কোরো না অসম্মান
যুদ্ধের করো আহ্বান
বীর হাতে মৃত্যুর গৌরব
করি যেন অনুভব
অর্জুন! তুমি! অর্জুন।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথা আর মল্লিকার নৃত্যের ভঙ্গিমায় তাকে ফুটিয়ে তোলার কি অসাধারণ প্রচেষ্টা তাকে ভাষায় বলার মত আমার সাংবাদিক জীবনে প্রথম ঘাটতি হলো। একটা খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ের মধ্যে কি অসাধারণ প্রতিভা ভাবা যায় না। আমার মুগ্ধতার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হলো।
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঘোষণা হলো কোন ছাত্রী যেন একা গেট থেকে না বেরোয় ,যাদের গার্জেন আসেনি তাদের মঞ্চের সামনে অপেক্ষা করতে হবে ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা আছে।
আমি অপেক্ষায় মল্লিকার জন্য কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল একটু দেরি হয়ে গেল তুমি গাড়ি এনেছো তো?' বিদিশা আর অনিতাকে একটু নামিয়ে দিতে হবে। ।ঘাড় নেড়ে এগিয়ে এলাম গাড়ির কাছে মনে মনে তবু শঙ্কা মল্লিকার সঙ্গে আজ আর কথা হবে না আলাদা করে।
যাহোক মল্লিকা ওর বন্ধুদের পিছনে বসিয়ে আমার পাশেই বসল। আমি গাড়িটি ইউনিভার্সিটির বাইরে বার করে ওদের বললাম তোমাদের তো অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয়নি আমরা যদি কোথাও বসে একটু খেয়ে নিই কেমন হয়। মল্লিকা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল কিরে খাবি তোরা ?, আমার কিন্তু ভীষন খিদে পেয়ে গেছে।
এমন কিছু তখন রাত হয়নি আমি ওদের নিয়ে ধর্মতলার এক রেস্টুরেন্ট খাবার জন্য গেলাম, মল্লিকার দুই বন্ধুই পার্কষ্টিটে থাকে তাই অসুবিধা নেই। এই প্রথম মল্লিকার জন্য কিছু করতে পেরে আমার খুব তৃপ্তি হচ্ছিল মনের।
খাবার পর খাবার পর ওদের নামিয়ে ফিরছি আমার পাশে আমার মল্লিকা, আমি মল্লিকা বনে মল্লিকার সৌরভে সুরভিত হতে হতে চলেছি কথা ও মিষ্টি হাসির অনাবিল মধুর স্পর্শের অন্য অনুভুতিতে।
এই পাওয়া জীবনের চলার পথকে ভীষনভাবে মধুময় করে। বাঁচার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায় ঠিক যেমন চাঁদ জোৎস্নার আলো উপহার দেয় আকাশকে কৃপনতা না করে ।
আমি মল্লিকাকে সরাসরি বললাম মায়ের সঙ্গে ওর পরিচয় করানোর কথা। মল্লিকার উত্তর তোমার মায়ের যদি আমার মত সাধারণ মেয়েকে না পছন্দ হয় । ওকে বোঝালাম মায়ের জন্য আমার রেসপেক্ট, সম্মান, ভালবাসা সব কিছু যেমন ভীষন ভাবে আছে।
সেইরকম তুমি এখন আমার জীবনে রেসপেক্ট্যাবল পার্ট, তোমাকে ছাড়া সকাল সন্ধ্যা কোন ভাবনায় আমার আসেনা আজকাল। আমার ভীষন তোমাকে দরকার এই অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
Comments
Post a Comment