মল্লিকাঅর্জুন (দ্বিতীয় পর্ব)

** মল্লিকাঅর্জুন  ( দ্বিতীয় পর্ব) **

** কলমে -- অলোকা চক্রবর্তী **


জীবন সবসময় আমাদের নিজেদের মত চলে না বরং আমাদের চলতে হয় সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য কিম্বা নিজের বেঁচে থাকার তাগিদের  জন্য। সেইরকম চাকরির নিয়মগুলো মনের কাটাছেঁড়ায় নির্ভর করে বসে থাকে না তোমার কাজ তোমাকেই করে যেতে হবে । 

        গত কয়েকদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটা করে রাজ্যে গেছি তারপর সেই শহর থেকে আরেক শহর ছুটেছি। কখনও সরাসরি সম্প্রচার করেছি , কখনও রাতে ফিরে রিপোর্ট সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে পাঠিয়েছি।  প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরের একটাই সুবিধা ওনি যেমন রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় থাকেন আমাদের জোটে তেমন এলাহি খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা।

       প্রায় দিন পনেরো পর বাড়িতে ফিরলাম বিভিন্ন রাজ্যে শহর পরিক্রমা করে একটু ক্লান্ত হয়েই। ফ্রেস হয়ে চায়ের কাপ নিয়ে মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা হতেই মা প্রস্তাব দিলেন একটি ভালো মেয়ের সন্ধান পেয়েছেন। 

       আমি রাজী থাকলেই মা কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মায়ের মুখে ভালো মেয়ে কথাটা শুনেই আমার মল্লিকার মুখটা মনে পরে গেল। মাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলি তোমার রান্না হয়ে গেলে আমাকে খেতে দাও একটা দরকারি কাজ সারতে হবে তাড়াতাড়ি। 

       কোনরকমে খেয়ে একদম ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রায় তিনটে বেজে গেছে তখন একজন দুজন করে বেড়িয়ে আসছে পড়ুয়ারা।আধঘন্টা পর দেখলাম যাকে দেখার লোভে এইখানে আমার আসা‌।

       মল্লিকা কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গেটের একটু দূরে দাঁড়িয়ে এত গল্পে মুশগুল আমি যে একদৃষ্টিতে ওকে দেখছি সেই দিকে ওর ভ্রুক্ষেপই নেই। অগত্যা আমাকে বুদ্ধি বার করে একটা চিরকুটে লিখতে হলো " আমি গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ"।সেই চিরকুট একটি ছেলের হাতে দিয়ে ওকে দেখিয়ে অনুরোধ করলাম দিয়ে দিতে।

      মল্লিকার হাতে ওটা যেতেই সবার চোখের আড়ালে পড়ল তারপর চোখ তুলে তাকাতেই আমার সঙ্গে ওর চোখাচোখি। আমি হেসে হাত নেড়ে আমার উপস্থিতি জানান দিলাম।

      কিছুক্ষণ পর মল্লিকা বেরিয়ে আসতে আমি ওকে অনুসরণ করলাম। একটু ফাঁকা হতেই কানের কাছে গিয়ে বলি একটু সময় কি আমার জন্য হবে ম্যাডাম। মল্লিকা কপট রাগ দেখিয়ে হাত নাড়িয়ে বলল আপনি তো আশ্চর্য মানুষ ! বিখ্যাত সাংবাদিক 'অর্জুন মুখার্জি' আপনিই এইকথা বলেন না কেন সেদিন। 

   ওর কথা বলার ধরণ দেখে  আমি হেসে ফেলি, ওকে বলি সংবাদ সংগ্রহ করার সময় পরিচয় দেওয়া বাধ্যতা থাকে, তোমার কাছে থাক না তোলা সেই পরিচয়। মল্লিকা বলল কেন -- সাংবাদিকতা কি খুব খারাপ পেশা যার কারণে আপনি বলতে চাইছেন না।

         আমি আর আর ফর্মালিটির মধ্যে না গিয়ে সোজাসুজি মনের কথাটা বলে ফেললাম,জানো মল্লিকা আমার পরিচয় যদি দেওয়াল তৈরী করে ফেলে তোমার সান্নিধ্য লাভের তাই ভয় পেয়ে সেদিন কিছু বলিনি তোমাকে আমার সমন্ধে। 

         মল্লিকা বিজ্ঞের মত হাসতে হাসতে বলল পারলেন না তো নিজেকে লুকাতে। আসলে আপনার স্বরটা আমার মনের থেকে গেছিল।তাই দূরদর্শনে আপনাকে না দেখা গেলেও গলার স্বরে বুঝেছিলাম আপনি হচ্ছেন সেই মানুষ।

         দুজনে মিলে কথা বলতে বলতে বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছি এবার মল্লিকাকে বললাম এবার একটু কি বসার সময় হবে তোমার। মল্লিকা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে অবশেষে ধরা দিল আমার মনের আহ্বানের কাছে। 

         তারপর আরো কতক্ষন নানা গল্পে কাটিয়ে মল্লিকাকে বাড়িতে নামিনয়ে ফিরে এলাম। আমার অবাক করা বিস্ময় মানবী এতটাই সহজ সরল আমার মত কাজ পাগল মানুষও সমস্ত ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে হয়তো বারবার ছুটে যাবে ভাললাগার মুহূর্তকে এনজয় করতে।তবে এবার দুজনেই দুজনের ল্যান্ডফোনের নাম্বার দেওয়া নেওয়া করেছি পরবর্তীতে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তার অনুভবে।

         পেশাগত কারণে আমাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয় আজকাল, তবে ভালবাসি কথাটা কেউ কাউকে না বললেও দুজনে ভালবাসার গভীর বন্ধনে জড়িয়ে গেছি বুঝতে পারলাম যখন মল্লিকা আমাকে আপনি থেকে তুমি সম্বোধনে ভূষিত করলো আমাকে। আস্তে আস্তে আমার মল্লিকা বনে আমি হারিয়ে যেতে লাগলাম ভাললাগার অমোঘ আকর্ষণে।

         খুব কাজের চাপ বাড়ি ফিরতে রোজ রাত হয়ে যায় তাই মল্লিকার সঙ্গে কদিন যোগাযোগ করা হয়নি। হঠাৎ রাতে মল্লিকা ফোন করলো মনে হলো একটু অভিমান হয়েছে।একথা--সেকথা বলে আমার মানিনীর মান ভাঙাতে চেষ্টা করছিলাম।

         অভিমানী গলায় বলল কালকে তোমার সময় হবে ?, আমাদের ইউনিভার্সিটির ফেয়ারওয়েল উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠান আছে বিকেল পাঁচটা থেকে। 

         আমি ফোনের অপরপ্রান্তে থেকে বললাম মহারাণীর আদেশ অমান্য করি কিরে। মল্লিকা সেই অভিমানী সুরে বলল আমি কিন্তু আদেশ করিনি হয় অনুরোধ করেছি। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বলি আদেশ--অনুরোধ দুটোই আমার কাছে অমূল্য তাই হাজির হবো ঠিক যথাসময়ে।

         

Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

আমি সেই মেয়েটা