অপ্রকাশিত গল্প
**অপ্রকাশিত গল্প (১ম অংশ
আজকে আলমারীতে একটা কাগজ খুঁজতে গিয়ে অনেকদিন পর পুরানো চিঠির গোছা খুঁজে পেলাম।চিঠি গুলো দেখতে দেখতে দুটো সূতোয় বাঁধা চিঠিতে গিয়ে চোখ আটকে গেল -- বুকের ভিতর কেমন মুচড়ে উঠলো-- দিনগুলোকে যদি ফিরিয়ে আনা যেত -- এক ভয়ানক অপারবোধ আমাকে অস্থির করে তুলল ---মনে হলো আমার এই অপরাধের কোন প্রায়শ্চিতই আমার অনুশোচনা কমাতে পারবে না---। আমার সবচেয়ে প্রিয়জনের অপ্রাসঙ্গিক অবুঝ মানসিকতার স্বীকার হয়ে আমার ভালবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলাম আমি---।
অনেকরাত হয়ে গেছে আমি চেয়ারে বসে একাকী--- রাস্তা শুনশান যেন নীরবতা পালন করছে--আকাশের মুখ ভার মনে হচ্ছে আমার চারিপাশের সবকিছু আমার কষ্টকে অনুভব করতে পারছে-- মাঝে মাঝে বৃষ্টি হাওয়ার সঙ্গী হয়ে আসছে আমি টের পাচ্ছি।-- আমি "অর্ধেন্দু চ্যাটার্জী(বাবান)" -- একটা সময় ব্যস্ততায় নিজেকে বন্দী করে কাটিয়েছি বছরের পর বছর। --জীবনের তখন লক্ষ্য কিছু ছিল না তবে লড়াই চলছিল আনমনে উপরে উঠার , --তবে আশার বাইরে অনেকটা উপরে উঠেছিলাম ---অতঃপর চিরন্তন যা সত্য মনুষ্য ধর্মের আমি গতানুগতিক জীবনধারায় হাঁফিয়ে উঠলাম--। সব ছেড়ে ছুঁড়ে ফিরে এলাম কিন্তু দিন তো আমার জন্য বসে নেই---সময় মত সূর্য ডুবে গেছে-- একটু একটু করে অন্ধকার হতে শুরু করলো সময় যত এগোল চারিপাশ শুধু শূন্যতা আর মনের মধ্যে অনুশোচনার গ্লানী---।ভুলে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম কই---।
চিঠিটা খুলে নিলাম আমার চোখের সামনে ----
প্রিয়
বাবান
অনেকদিন পর তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম না--না কোন জোরাজুরি করতে নয় তবে যে বাবানকে আমি চিনতাম সেই বাবানের কাপুরুষতা আমাকে ভীষণ ভাবায় তাই মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে তোমার কাছে একটা প্রশ্নের উত্তর জানার-- আর একটা খবর দেবার জন্য চিঠি লিখছি -- খুব জানতে ইচ্ছে করে কেন তোমার স্বেচ্ছা নির্বাসন ?-- কেন তুমি সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে একা একা থাকো--- কিসের জন্য তুমি বাড়িতে আসোনা --এমনকি তোমার মা কেমন আছেন তাও খোঁজ করোনা--।আজকে তোমার মা আমাকে ডেকে পাঠিয়ে তোমার ঠিকানা দিয়ে অনুরোধ করেন চিঠি লিখতে বাড়িতে আসার জন্য --তাই হয়তো সুযোগ পেলাম--- নইলে তুমি তো আমার নাগালের বাইরে--- সুযোগ রাখোনি আমার মনের যন্ত্রণা জানানোর।
তুমি তো এইরকম স্বার্থপর মানুষ ছিলে না মায়ের খোঁজ নেবে না --- তবে কি তোমার জীবনে আমি অবাঞ্ছিত ছিলাম--- আমাকে দূরে সরাতে তোমাকে এইসব ছলনা করতে হচ্ছে।--- তুমি আমাকে সত্যি কথাটা পরিস্কার করে বলতে পারতে--- তোমার জন্য আমি সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি।-- তোমার চুপ করে থাকাটা আমার সহ্য হয়না--- মনে হয় ছোটবেলা থেকে যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি--- মনের প্রত্যেকটা অনুভূতিতে যার ছবি গেঁথেছি-- সেইসব মিথ্যা হয়ে গেল---। আমার বিশ্বাসকে তুমি নষ্ট করোনা--- ফিরে এসো যত তাড়াতাড়ি পারো -- আমরা দুজনে মিলে সব সমস্যার সমাধান করে নেবো ।
মনে আছে একদিন ছাদে তুমি আমার হাতটা ধরে বলেছিলে--- "ইন্দু" -- তোমার বাড়ির মত আমি তোমাকে এতো ঐশ্বর্য আরাম হয়তো দিতে পারবো না,-- কিন্তু আমার বুকের চাতালে তোমার জন্য
শীতলপাটি বিছিয়ে রাখবো --তুমি তাতে বসো আমার সম্রাজ্ঞী হয়ে -- নিজের মনের মত করো তোমার সাম্রাজে শাসন করো ।--- এই চিন্তায় বড় সুখ "ইন্দু" -- কথা দাও এই সুখ থেকে কখনও আমাকে বঞ্চিত করবে না --- আমি আমার সব ভার তোমাকে দিতে চাই। --- নেবে-- "ইন্দু" ?এই অধমের দায়িত্ব।---"ইন্দু" তুমি আমার সব ঘাটতি গুলোকে লুকিয়ে রেখো তোমার ভালবাসার আঁচলে ।---আমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হবো তোমার নির্দেশিত পথে চলতে চলতে ---ইন্দু আমি জানি ভগবান তোমাকে গড়েছে সমস্ত গুণ সম্পূর্ন করে --- তোমার স্পর্শে, তোমার সাহচর্যে আমি জীবনের নতুন ছন্দ পাবো --- আমার মত সৌভাগ্যবান আর কে আছে এমন বলো --।
অথচ সেই তুমি আজ কতদিন আমার একটা খোঁজ নাওনি,---একসময় সেই জলপাইগুঁড়ি থেকে সুযোগ পেলেই ছুটে আসতে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য--। তারপর পাশ করলে--- হাসপাতালের চাকরিতে যোগদান করলে তার আগে আমাকে বলে গেলে,-- পরেরবার এসে মাকে পাঠাবে আমাদের বিয়ের কথা বলতে।---কিন্তু তারপর কি হলো আজ চারবছর কোন যোগাযোগ রাখোনি ,--দু -একবার তোমাদের বাড়িতে এসেছো কয়েকঘন্টার জন্য --তবে আমার সঙ্গে দেখা করোনি।
যাক যে খবর জানতে চিঠি লিখছি--- আমাদের বাড়ি থেকে আগামী ২ রা অগ্রাহয়ন আমাকে পরগোত্রে সম্প্রদান করার দিন ঠিক করেছে--- অচেনা -অজানা একটা মানুষ আমাকে নিয়ে চলে যাবে তাঁর ঠিকানায়--- জানি না ওই মানুষটাকে আমি মন থেকে মেনে নিতে পারবো কিনা---না ভালবাসতে পারবো --ভালবাসা-- সেটা যে একজনকে উজাড় করে দিয়ে দিয়েছি। আমার তো ঝুলি শূন্য -- সেখানে দেবার মত ভালবাসা আর নেই --- দীর্ঘশ্বাসের ভারে ক্লান্ত আমার ঝুলি -- ।যদি পারো সময়মত এসে আমাকে অন্য কারুর গৃহিনী হবার এই বিরম্বনা থেকে বাঁচিও--- ভালবাসায় অভিমান থাকে তবে তাকে বাড়তে দিওনা যাতে আফসোস মনের বেদনাকে আরও বাড়িয়ে তুলে জীবনকে দূর্বিসহ করবে।
--ইতি--
* ইন্দু( ইন্দ্রানী)*
*ক্রমশ*
Comments
Post a Comment