অভিনব প্রতিশোধ (৩য় পর্ব)

**অভিনব প্রতিশোধ ( ৩য় পর্ব) **
** অলোকা চক্রবর্তী **

 ওই অট্টহাসি শুনে আমি ভয়ে নন্দিতার হাতটা চেপে ধরি , নমিতা খুব সাহসী মেয়ে আচমকা ওইরকম শব্দে খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেছিল। তবে এক মিনিটের মধ্যেই ও নিজেকে সামলে আমাকে বলল-- "ভয় পাস না মনে সাহস আন। জানবি ভীতু মানুষকে ভয় দেখানো খুব সহজ, মুখোমুখি হতে হবে সত্যের সে যতই নির্মম হোক নইলে এগিয়ে চলার পথ পাবিনা। শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বাঁচা যায় না-- 'নন্দিনী'--। 
 
আমি কেঁদে ফেললাম বললাম --"বেশ তো মানিয়ে নিয়েছিলাম তবে কেন এইভাবে আবার ফিরে এলো" --'ও'--। নমিতা আমার হাতটা ধরে আমাকে আশ্বস্ত করে বলল "একটু ভরসা রাখ আমার উপর"। 
 
"নন্দিনী"-- 'ফিরে আসা-- চলে যাওয়া'-- সবটায় কিন্তু ধোঁয়াশা-- আমরা সঠিক কি হয়েছে আমরা তো জানি না -- আমরা অনুমান করেছি -- ভেবে নিয়েছি -- এটাই হয়েছে চরম পরিণতি-- অথচ দেখ কোন নির্ভরযোগ্য প্রমান নেই আমাদের কাছে --কোথাও একটা 'কিন্তু' থেকে যাচ্ছে যখন মেলাতে পারছিনা অবাস্তব প্রমান সামনে আসছে"--।

নমিতার কথাটা শেষ হতেই  সেই অট্টহাসি আরো ভয়ঙ্কর ভাবে ঘরের দেওয়ালে আছড়ে পড়ল। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই চোখ খুলে দেখলাম আমি কলকাতায় নমিতার ফ্ল্যাটে । আমি ধরপড় উঠে বসে বললাম --"আমি তোর এখানে কি করে এলাম নমিতা"---। নমিতা বলল কি আশ্চর্য দেখ তোর ওখানে গেলাম হাসির রহস্য উদঘাটন করতে আর তুই অজ্ঞান হয়ে একাকার কান্ড করে বসলি । ভগবানদা তো কান্নাকাটি করে একসা, আমার হাত ধরে খালি বলছেন আমার দিদিমণিকে তুমি বাঁচাও" । 

আমি তখন তাকিয়ে দেখি ভগবানদা একপাশে দাঁড়িয়ে চোখ ভর্তি জল নিয়ে। মনে মনে বললাম ওই মানুষটার জন্যই আমাকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে নিজের যন্ত্রণা ভুলে। তাছাড়া নমিতার জন্য আমার ভাবার সময় হয়েছে স্বার্থপরের মত নিজের কথা ভেবে অনেকগুলো বছর চলে গেছে। অনেক সময় তো আমাদের চিন্তার বাইরেও তো অনেক ঘটনা ঘটে অসম্ভব হলেও । 

 নমিতা তখন বলে উঠল  --"ভগবানদা ওকে একটু খেতে দাও বেচারা সারাদিন কিছু খাইনি", ভগবান দা আমার কাছে এসে বললেন-- দিদিমণি তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই এই জগতে--তুমিই আমার সন্তান,তুমিই আমার বোন, তুমি আমার মা---তুমি ভালো না থাকলে দিদিমণি আমি কি করে ভালো থাকবো বলো। দিদিমণি তোমার যখন দশবছর বয়েস তখন তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম-- তারপর তুমি বড় হলে কলকাতায় পড়তে এলে, তোমার কলকাতায় চাকরি-- সবসময় আমি তোমার সঙ্গে ছায়ার মত থেকেছি,  তোমার বাবা বলেছিলেন -- "আমাদের অবর্তমানে  মেয়ের গার্জেন তুই --বড় দাদার মত আগলে রাখবি সারাজীবন"--বলে কাঁদতে আরম্ভ করলো।

নমিতা বলল,,-- ঠিক আছে ভগবান দা অতচিন্তা করোনা আমরা সবাই আছি তো। তোমার দিদিমণির কিছু হয়নি এইতো দেখো কত ভালো আছে। নমিতা আমার হাতটা ধরে বলল-- "প্লীজ আয় এবার টয়লেট গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিবি মুখে-চোখে একটু জল দে ভালো লাগবে"--।

 "নন্দিনী"--এবার তুই একটু নিজের কথা ভাব --আকস্মিক ঘটনায় জানি জীবনের অনেক কিছু পাল্টে যায়-- একটু একটু করে মনের মধ্যে জাল বোনা স্বপ্ন গুলো যখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখন মানতে খুব কষ্ট হয় জানি রে-- তবুও আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে অন্য কোন ভাবনায় নিজেকে জড়িয়ে--।

আমি বললাম-- হঠাৎ এখানে আমাকে আনলি কেন ?, নমিতা বলল --এছাড়া উপায় কি ছিল-- তুই অজ্ঞান হয়ে যাবার পর ভগবানদা তোদের বাড়ির ডাক্তারকে ডেকে আনলেন  ওনি সব ঘটনা শোনার পর বললেন-- "জ্ঞান ফিরলে ওকে একটু কিছু খাইয়ে এই ঔষধটা খাইয়ে দিন কিছুক্ষণ ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে। সবচেয়ে জরুরি এখন কিছুদিন ওকে এই পরিবেশ থেকে অন্য কোথাও কদিন রাখলে ভালো হয়"--।তাই আর না ভেবে তোকে নিয়ে চলে এসেছি।

আমি নমিতার কথামতো একটু মুখে-চোখে জল দিয়ে এসে ভাবছি -- কোনটা সত্যি  আর কোনটা আমার অবচেতন মনে ভয়ের জন্য ভাবনা। কই এতদিন আমাদের বাড়িতে নিরবিলি রাতে ছাদে ঘোরাঘুরি করেছি একা কোনদিন তো ভয় পাইনি। তবে কেন আমি ভয় পাচ্ছি --যেটাকে সত্যি বলে এতকষ্ট পাচ্ছি তার মধ্যে কি কোন রহস্য আছে--। কি জানি নমিতার কথাবার্তা শুনে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্ন-- যা সত্যি বলে ভাবছি তা-- কি রহস্যময় -- মনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রশ্নকে প্রকাশ না করে তাকে মনের মধ্যে সংগোপনে রেখে বললাম--- "নমিতা"-- "আমাকে একটু বিমানের কাছে নিয়ে যাবি"?-- ।

নমিতা বলল-- "যাবি নন্দিনী -- চল আমরা যাই -- বিমান আমার কাছে মুখ খোলে না-- খুব কান্নাকাটি করে জিজ্ঞেস করলে বলে-- "সত্যিটা তুমি জেনে আর কি হবে-- যা হবার তা হয়ে গেছে--  আমার ভবিষ্যৎ--আমার সম্মান-- সব ধুলিসাৎ হয়ে গেছে--এতোদিনের বন্ধুত্ব তাও সে আমাকে বিশ্বাসঘাতক ভাবলো-- তাঁর চিন্তা তো বদলাবে না"--।

 "নন্দিনী" --"তুই কথা বলে দেখতে পারিস‌ --তোর মনের মধ্যে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাস না বা মেলাতে পারছিস না -- সেগুলোর উত্তর বিমান জানে কিনা"--।

-ক্রমশ-

Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

আমি সেই মেয়েটা