অভিনব প্রতিশোধ (৪র্থ পর্ব)
**অভিনব প্রতিশোধ ( চতুর্থ পর্ব)**
** অলোকা চক্রবর্তী**
পরেরদিন আমাকে নমিতা নিয়ে গেল না বলল --"তোর শরীরটা এতো খারাপ হয়েছিল -- তারপর কাল সারাদিন তোর খাওয়া হয়নি-- অত ধকল তোকে নিতে হবে না--তুই আগে দুটো দিন রেষ্ট নে তারপর না হয় আমরা যাবো" ।
আমি বললাম "আমার কোন অসুবিধা নেই আজকে দিব্যি যেতে পারবো এখন তো ভালো আছি"।
নমিতা হেসে বলল "থাক তোকে আর বাহাদুরি দেখাতে হবে না--- জানি অনেক প্রশ্নই তো তোকে বিগত পাঁচ বছর ধরেই ভাবাচ্ছে--- তুই নিজের মধ্যে গুমরে রেখেছিস-- কত কেঁদেছিস-- নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে সবরকম আনন্দ থেকে এক সূদর দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে আছিস -- কম শাস্তি তো নিজেকে দিসনি -- এবার অন্তত তুই বেড়িয়ে আয় মনের যন্ত্রণা থেকে"।
আমি বললাম "সময় মানুষকে সময় দেয় নিজেকে সামলাবার --- তারপর বিধ্বস্ত মন আসতে আসতে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়-- নইলে ভাবতে পারছিস সেই সময়টা আমি একদম একা--- যেদিকে তাকাই শূন্যতা -- নেই নেই ধ্বনি প্রতিফলিত হত -- কেউ সান্ত্বনা দেবার ছিল না-- মনের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করতে হয়েছে--- শুধু চোখের জল সম্বল ছিল তখন আমার"।
নমিতা এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল --" সময় মানুষকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে ঠিকই ---কিন্তু তোকে কি পেরেছে বদলাতে-- পাঁচ বছর পরে তোকে দেখলাম -- দেখে মনে হলো পুরোনো স্মৃতি আঁকড়ে এখনও তুই আছিস--- হ্যাঁ-রে ভালবাসার মানুষ তোর জীবনে নেই বলে নিজের কথা ভাববি না---যদি কোন দিন জানতে পারিস তোর এই স্বার্থ ত্যাগ তার কাছে মূল্য নেই-- তুই যখন তাঁর জন্য চোখের জল ফেলেছিস --সে তখন নিজের আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এবং নিজের সম্মান অটুট রাখতে ব্যস্ত---।"
আমি বললাম-- "কি বলছিস এইসব ?-- সেদিন সবচেয়ে আমি বেশী খুশী হবো সে ভালো আছে জানতে পারলে --- । ভালবাসার মানুষকে কাছে না পেলেও কিছু যায় আসে না সে যদি ভালো থাকে থাকুক তাঁর মতো"--।
নমিতা বলল -- "যদি জানতে পারিস সে তোকে ভীষন ভাবে ঠকিয়েছে তখন তোর ভালবাসা কি একই জায়গায় থাকবে--- সবটাই যদি মনে কর একটা গভীর রহস্য হয় ভালবাসার নাম করে -- হয়তো কেউ কারুর উপর প্রতিশোধ নিয়েছে-- তাঁর লক্ষ্য তুই,কিম্বা আমি অথবা বিমান যে কেউ হতে পারি"---।
দুদিন পর --নমিতা বলল "চল গাড়ি করে যেতে কথা হবে রেডি হয়েনে-- বুঝতে পারছি তোর অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ---- তুই হয়তো মনের ভিতরের প্রশ্নের জটে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিস -- অনেকদিন হয়ে গেছে এবার জট খুলতে হবেই নইলে--- তোর, আমার, বিমানের-- আমাদের জীবন গুলো তো ছারখার হয়েই গেছে--- আরও সর্বনাশের পথে নিয়ে যাবে।"
নমিতা চেষ্টা করে অনুমতি বার করলো বিমানের সঙ্গে দেখা করার -- কিছুক্ষণ পর বিমানের মুখোমুখি আমরা--- আমি বিমানকে ওইরকম চেহারায় দেখে ভাষাহীন হয়ে গেলাম-- সুপুরুষ চেহারার , অমায়িক পার্সোনালিটির একটা মানুষের একি অবস্থা হয়েছে-- সত্যি তো আমি একবারও বিমানের কথা ভাবিনি--- অভিনবের সন্দেহ হতে পারে বিমান সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে --কিন্তু আমি তো জানি বিমান মন প্রাণ দিয়ে নমিতাকে ভালবাসত-- হয়তো এখনও ভালবাসে একই রকম--- ওদের নিস্পাপ ভালবাসার কথা আমার তো অজানা নয় -- তবে বিমানের কি অভিপ্রায় থাকবে শুধু শুধু অভিনবের ক্ষতি করার--- বিমানকে তো আমি কাছ থেকে জানি কয়েক বছর ধরে--তবে কি অন্য কোন গল্প আছে--- কি রহস্য থাকতে পারে এই দূর্ঘটনার পেছনে---কোন তৃতীয় ব্যক্তি কি যুক্ত ---? নানা প্রশ্ন মনের ভিতরে----।
বিমানকে জিজ্ঞেস করলাম "কেমন আছো তুমি---?," বিমান ম্লান হেসে বলল "তাহলে অবশেষে তোমার এই বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর মুখ দেখতে ইচ্ছে হলো"---আমি বললাম "এইরকম বলছো কেন---- মানছি আমার নিজেকে সামলাতে একটু সময় লেগেছে ঠিকই --- তুমি বুঝতে পারছো আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল --শুধু দিনটা ঠিক হয়নি দুজনের মা, বাবা কথা বলে ঠিক করবে বলে--- সব স্বপ্ন দেখো মিথ্যা হয়ে গেল----।"
বিমান বলল "ওই তো তোমার পাশে তোমার প্রিয় বান্ধবী দাঁড়িয়ে --- ওকে দেখে বুঝতে পারছো না আমরা একই নৌকাই ভাসছি তোমার মতো স্বপ্ন ভাঙ্গার---'নন্দিনী' --আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম তুমি, আমি, নমিতা,অভিনব --পরস্পরের ভাললাগা, পছন্দ, অপছন্দ আমরা সবটুকু জানতাম ---তবুও তুমি কি করে বিশ্বাস করলে--? -- আমি মদ খেয়ে বেহুঁশ হতে পারি"---।
আমাদের আর জেল কর্তৃপক্ষ দাঁড়াতে দিল না--- শুধু আমি বিমানকে বিদায়ের আগে বললাম -- "পারলে আমাকে ক্ষমা করো--- আমার প্রায়শ্চিত্ত করার সময় এবার হয়েছে --- নিজেকে সামলে তোমাদের কথা ভাবা উচিত ছিল আমার --এতোটা ভাবলেশহীন হয়ে থাকা উচিত হয়নি আমার বুঝতে পারছি--- তোমার সঙ্গে আশা করি আবার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে" ---।
Comments
Post a Comment