অভিনব প্রতিশোধ (২য় পর্ব)

**অভিনব প্রতিশোধ (২য় পর্ব) **
** অলোকা চক্রবর্তী**

নমিতা হেসে বলল টয়লেটটা কোনদিকে বল আমি ফ্রেস হয়ে এসে তোকে সব বলছি। আমার যেন ঘোর কাটছে না এই পাঁচ বছরে খুব কমই কথা হয়েছে নমিতার সঙ্গে ।অভিনবকে হারিয়ে ফেলার পর আমি আগের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এই নির্জন জায়গায় আজ পাঁচ বছর আছি। অথচ একটা সময় আমি আর নমিতা হরিহর আত্মা ছিলাম। কত ছুটির দিন নমিতা,বিমান, আমি আর অভিনব কলকাতার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতাম। আমাদের তখন নেশা ছিল কলকাতার বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট গুলোতে গিয়ে ওখানকার বেষ্ট খাবার টেষ্ট করার। 

একই কলেজে চারজন পড়তাম সেইজন্য আমাদের সময় করে বেরোতে অসুবিধা হতো না। আমাদের চারজনের মধ্যে অভিনব সবচেয়ে স্কলার ছিল, বিদেশের ডিগ্রি ছিল, মাঝে মাঝে অভিনব বিদেশের বিভিন্ন কলেজে লেকচার দিতে যেত। খুব স্মার্ট আর সুদর্শন যুবক, কথা বার্তায় তুখোড়, গুছিয়ে কথা বলার ধরণ দেখেই যে কারুর অভিনবকে ভালো লেগে যাবে। এই অভিনব আমার প্রাণের মানুষ হয়ে উঠল ক্রমে ক্রমে, অভিনব কিছুক্ষণ আমাকে না দেখতে পেলেই আমাদের ডিপার্মেন্টে এসে খোঁজ করতো এমনই পাগলের মত আমাকে ভালবাসত। 
 সে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেল আমি এখনও মানতে পারিনা।

আমার সঙ্গে অভিনবের একটু ঝামেলা হয়েছিল সেই সময় । আমি বাড়িতে যাচ্ছিলাম সঙ্গে নমিতা আর বিমানের যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু নমিতা ওর মায়ের শরীর খারাপের খবর পেয়ে বাড়িতে চলে গেছিল। আমি তখন বিমানকে বললাম টিকিট ক্যানসেল করে কাজ নেই তুমিই চলো ঘুরে আসবে। তখন অভিনব বিদেশ গেছিল কয়েকদিনের জন্য। ফিরে এসে শোনা মাত্রই ভুল বুঝে আমার সঙ্গে কদিন খুব রাগারাগি করলো যাহোক ওকে অনেক করে বুঝিয়ে মান ভাঙ্গালাম।

এরপর আমরা কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেড়াতে গেলাম বিষয়টা এনভারমেন্ট সায়েন্সের তাই অভিনবের উপর দায়িত্ব পরেছিল, আমি আর নমিতা ভুগোল ডিপারমেন্টের আরো দুজন কলেজ থেকে এবং বিমান গেছিল । আমরা দার্জিলিং গেছিলাম প্রায় পঁচিশ জন ছেলে -মেয়েদের নিয়ে। বেশ আনন্দে কেটে গেল কয়েকদিন ফেরার আগেরদিন সবাই মিলে গল্প করছি তখন অভিনব বলল চলো সবাই মিলে ম্যালে যাই এই 'ফুলমুন' রাতে পাহাড়ের আলাদা সৌন্দর্য দেখে আসি। আমি বাধা দিয়ে বললাম এতো রাতে বাইরে যাবার দরকার নেই। অভিনব বলল আরে এসেছি যখন এই সময়ে-- তখন দেখেই আসি হয়তো আবার আসবো কিন্তু তখন এইরকম চাঁদের আলো থাকবে কিনা জানা তো নেই। দার্জিলিং তো মেঘে ঢাকা থাকে বেশি সময় তার সৌন্দর্য রহস্য নিয়ে। একরকম জোর করে অভিনব বিমানকে নিয়ে গেল । 

অনেক রাত হয়ে যাবার পর আমি আর নমিতা ওরা ফিরচ্ছে না দেখে সমানে ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না। আমাদের সঙ্গে যে দুজন কলিগ এসেছিল ওরা একটু আগে শুয়ে পরেছিল ওদের গিয়ে ডাকলাম। ওরাও ফোনে পেল না ওদের, তখন হোটেলের কতগুলো ছেলে কে নিয়ে আমরা গেলাম। কিন্তু গিয়ে এই দৃশ্য দেখবো ভাবিনি। বেঞ্চে শুয়ে 'বিমান' হুস নেই ওর পাশে মদের বোতল আর কিছুটা দূরে এক পাটি চটি অভিনবের পাহাড়ের একদম কিনারে। চিৎকার করলাম "অভিনব" --- কিন্তু কেউ সারাদিল না---। 

পরেরদিন সবাই ফিরে এলাম ওদের দুজনকে ছাড়া। বিমানকে পুলিশ হেফাজতে নিল জিজ্ঞাসা করার জন্য কিন্তু বিমান ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে আছে। আমাদের সঙ্গে একটাও কথা বলেনি। যে বিমান মদের গন্ধ সহ্য করতে পারতো না সে সেদিন বেহুঁশ অবস্থায় কি করে এটা সম্ভব হয়েছিল আমার কাছে আজও পরিস্কার নয়। আমি খুব মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে কয়েকদিন কাটিয়ে এখানে চলে আসি সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। দু'বছর বাড়িতেই বসে ছিলাম তারপর এখানকার কলেজে চাকরিটা পাই।

নমিতা ফ্রেস হয়ে এসে বলল জানিস তো সেই ভোরবেলায় ট্রেন থেকে নেমেছি তারপর এখানকার কিছু কাজ সেরে ওরা হোটেলে থাকল আমি তোর কাছে চলে এলাম। আমি বললাম ওরা মানে কে --?। নমিতা বলল মনে নেই রঞ্জনা আর বিলাসের প্রেম কাহিনী। সেই বিলাস আর আমাদের ডিপার্মেন্টের অমিত , আমি অবাক হয়ে বলি-- "হঠাৎ কিসের জন্য তোরা আমাদের এখানে এলি"? --বেশ তো ছিলাম পুরানো সবকথা ভুলে।

নমিতা বলল তুই কি সত্যি ভালো আছিস নন্দিনী--?। 

সেইসময় চা নিয়ে এসে ভগবান দা বলল না গো দিদিমণি ভালো নেই, কয়েকদিন হলো কি হয়েছে দিদিমণির খায় না ভালো করে খালি অন্যমনস্ক্য-- ডাকলে ভূত দেখার মত চমকে উঠে ‌। আমি চুপ করে থাকলাম কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না আবার মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন ওরা কেন এখানে এসেছে--?। 

নমিতা দরজাটা ভেজিয়ে আমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই আবার সেই অট্রহাসি---দরজা খুলে দুলতে লাগলো বিভৎস আওয়াজ করে--।

** ক্রমশ **

Comments

Popular posts from this blog

আমার স্বপ্নের ঘর

মল্লিকাঅর্জুন ( চতুর্থ পর্ব)

আমি সেই মেয়েটা