খোলা চিঠি

**খোলা চিঠি আকাশের ঠিকানায় **
                                                   
       প্রিয় 
                  আজ অনেকবছর তোমাকে ছাড়া একলা চলেছি আর বোধহয় পারছি না ।ভরসার হাতটা ধরার জন্য যখন হাত বাড়িয়ে দিই ফিরে আসে শূন্য হাত আমার। তখন শূন্যতা আমাকে বুঝিয়ে দেয় তুমি সূদর দ্বীপের বাসিন্দা যেখানে আমি নিজের ইচ্ছায় পারবো না যেতে। এইরকম তো আমাদের কথা ছিলনা , তুমি কথা রাখলে না 'আমাকে ধূ,ধূ প্রান্তে একা রেখে হারিয়ে গেলে। তোমার অভাব প্রতিটি মুহুর্তের আমার ভালো থাকার মনোবলকে তছনছ করে দেয় । জানো কতকিছুর মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখেও আমি ভালো থাকতে পারছি না কিছুতেই । 

তুমি ছিলে আমার অন্তর্যামী, আমার কোনদিনই খুব চাহিদা ছিল না তবু আমার চাওয়া গুলো কখনও তোমাকে মুখ ফুটে বলতে হয়নি । তুমি আমার মুখ দেখেই বুঝে যেত কিসের অন্তরদ্বন্দ্ব চলছে আমার মধ্যে প্রকাশ করতে পারছি না । কত সহজেই তুমি মিষ্টি কথায় আমাকে মুক্ত করতে সমস্ত মানসিক যন্ত্রণা থেকে ।আমার ইচ্ছা গুলো তোমার ভালবাসায় স্বাধীন ভাবে ডানা মেলত , আমার চোখের জল তোমাকে ভীষণ বিচলিত করতো । তুমি অস্থির হয়ে যেতে হয়তো রাগের মাথায় কিছু বলেছো সেটা আমার থেকে তোমাকে বেশী কষ্ট দিত। পারস্পরিক সহযোগিতা আর বোঝাপড়ায় কতগুলো বছর কত আনন্দে, কত অভিমানে পার করেছি আমরা ।আজ সত্যি মিথ্যা হয়ে গেছে আমাদের সম্পর্কের বান্ধন সবটাই মনে হয় স্বপ্ন ।  

তখন আমার সকাল হতো দুকাপ চা তৈরি করে ,
খবরের কাগজের সাথে অপেক্ষা তোমার ওঠার । কখনও তুমি আগে উঠে চুপিচুপি চা করে আমাকে ডাকতে , আমি বলতাম এমা আমাকে ডাকোনি কেন ?। তুমি হাসতে হাসতে বলতে একই কাজ করতে কারুর রোজ ভালো লাগে না আমি বুঝি ,এইরকম ছিল তোমার চিন্তাধারা, তোমার উদারতা । আজকাল সকালে চা করে নিয়ে এসে বসে ভাবি এই পাওনা কেন আমার ভাগ্যে । আজ আমার ভাবনা নেই তোমার ব্রেকফাস্টের ,কিম্বা তোমার অফিস যাবার লাঞ্চ করার ,তুমি অফিস যাবার সময় যা যা পড়বে , শার্ট থেকে রুমাল পর্যন্ত গুছিয়ে রাখা খাটের ওপর । আমার উদ্বেগ নেই কেন তোমার অফিস থেকে আসতে দেরী হচ্ছে ।সেই ভোর থেকে গভীর রাত্রি কাটে আমার অচেনা ছন্দ,অনাকাঙিক্ষত অফুরন্ত সময় নিয়ে।আমার তো গন্ডি ছিল তোমাতে শেষ।আমি জানি না আমার অপেক্ষা কবে শেষ হবে যেদিন আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরবো আমায় আর ভোরের আলো ঘুম ভাঙ্গাতে পারবে না । 

কখনও সারাদিন তোমার সময় দখল করে রাখে আমার কলম ,আবার আবার যেদিনে মন জুড়ে তোমার আনাগোনা শুরু হয় তখন থেমে যায় আমার কলম ।ঝাপসা চোখে আমি খুঁজে যাই চেতনায়, অবচেতনায় আমার জগতে তোমাকে,, কিন্তু বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসের কাছে আমি হেরে গেছি ।রাতের পর রাত বিনিদ্র কাটে আজ এতবছর পরও। আজকাল কাল রান্না করতে আর আর ভালো লাগে না, আমার রান্না শেখা তো তোমার জন্য। তুমি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে ,সবার কাছে বলতে আমার বৌয়ের মত কেউ ভালো রান্না করতে পারেনা। তোমার ছেলের আবদারে কখনও কখনও রান্না করি কিন্তু তোমার ছেলে তো তোমার মত নয় , সে পেয়েছে তার মায়ের মত ভীষণ চাপা স্বভাব।
    তবে তোমারই মত আমার শরীর খারাপ হলেই সে অস্থির হয়ে পরে। তাও তোমার অভাব আমাকে ভীষণ প্রাণহীন করে ফেলেছে।কিসে আমি আনন্দ পাই আমি আজ বুঝতে পারি না ।তুমি চলে যাবার কিছুক্ষণ আগেও বুঝিনি তোমার সময় ফুরিয়ে গেছে আমাকে দেবার। আজকে তোমার ছেলে চেষ্টা করে তার মাকে ভালো রাখার কিন্তু মনটায় যে অব্যক্ত যন্ত্রণায় ভরে আছে তোমাকে ছাড়া । যদিও জানি তুমি আমাদের ছেড়ে কোথাও যাওনি হয়তো তোমাকে দেখতে পাইনা এটা সত্যি ,তবু আমার বিশ্বাস তুমি পারবে না এতো অপরিসীম মায়া আর ভালবাসায় জড়িয়ে আমাদের রেখেছিলে সেই আমাদের ছেড়ে থাকতে । হয়তো সেইজন্য আজও অনুভব করি এক অদৃশ্য শক্তি আছে আমাদের রক্ষার্থে । তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই,পৃথিবীর কোন সুখ আর আমাকে স্পর্শ করেনা । চলতে হচ্ছে চলছি সবকিছুই আমাকে ভোলায় ক্ষণিকের জন্য,আমি আবার ফিরে যাই আমার অজান্তে তুমিময় আমার চেনা জগতের স্মৃতিতে। আর নয় ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত আমি এবার খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে চাই তোমার কাছে।

শেষ করলাম তোমার----

** কলমে --অলোকা চক্রবর্তী ** 

Comments

Popular posts from this blog

আমি মেঘ হতে চাই

তুমি যখন ভাবনায়

ফিরে দেখা (১ ম পর্ব)